শিশুদের হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয়?

2

 শিশুদের হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয়?

শিশুদের মধ্যে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা নির্ধারণ করা তাদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

হিমোগ্লোবিন হলো লোহিত রক্তকণিকাগুলির একটি প্রধান উপাদান, যা শরীরে অক্সিজেন পরিবহন করে। যদি শিশুদের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে কমে যায়,

তা হলে তাদের রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া হতে পারে, যা তাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

তাই হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কত হলে রক্ত দিতে হবে, তা জানা প্রতিটি অভিভাবকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

#### হিমোগ্লোবিন কী?

হিমোগ্লোবিন একটি প্রোটিন, যা লোহিত রক্তকণিকাগুলির (RBCs) মধ্যে থাকে।

এটি লোহার (Iron) সাথে সংযুক্ত থাকে এবং শরীরের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন পৌঁছানোর জন্য দায়ী। যখন রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায়, তখন শরীরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ হয় না।

এটি ক্লান্তি, দুর্বলতা, এবং অন্যান্য জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

#### শিশুদের মধ্যে হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা

 

শিশুদের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বয়স অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। সাধারণত, নবজাতকের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ১৩.৫ থেকে ২৪ গ্রাম/ডেসিলিটার (g/dL) হওয়া উচিত।

২ থেকে ৬ মাস বয়সের শিশুদের ক্ষেত্রে এটি ৯.৫ থেকে ১৩ গ্রাম/ডেসিলিটার হওয়া উচিত।

৬ মাস থেকে ২ বছর পর্যন্ত হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা ১০.৫ থেকে ১৪ গ্রাম/ডেসিলিটার এবং ২ থেকে ৬ বছরের শিশুদের ক্ষেত্রে এটি ১১.৫ থেকে ১৫.৫ গ্রাম/ডেসিলিটার হওয়া উচিত।

 শিশুদের হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয়?

#### হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেলে কী হয়?

যদি শিশুর হিমোগ্লোবিনের মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে কমে যায়, তবে তা রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়ার কারণ হতে পারে।

রক্তশূন্যতা হলে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না, ফলে তা মারাত্মক হতে পারে।

শিশুরা রক্তশূন্যতা হলে দুর্বল হয়ে পড়ে, মাথা ঘোরায়, শ্বাসকষ্ট হয়, এবং ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যায়।

#### কোন মাত্রায় রক্ত দিতে হবে?

রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়ার প্রভাব এবং চিকিৎসা নির্ভর করে হিমোগ্লোবিনের মাত্রার উপর।

সাধারণত, শিশুদের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ৭ গ্রাম/ডেসিলিটার বা এর চেয়ে কম হলে, চিকিৎসক রক্ত দেওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন।

তবে এটি নির্ভর করে শিশুর শারীরিক অবস্থা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার উপরও।

##### ৭-১০ গ্রাম/ডেসিলিটার:

এটি মৃদু থেকে মাঝারি রক্তশূন্যতার নির্দেশক। এই অবস্থায়, রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে না,

কিন্তু হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর জন্য আয়রন সমৃদ্ধ খাবার ও সাপ্লিমেন্ট দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।

##### ৫-৭ গ্রাম/ডেসিলিটার:

এটি গুরুতর রক্তশূন্যতার লক্ষণ এবং এই অবস্থায় রক্ত দেওয়া জরুরি হতে পারে। এই স্তরে শিশুরা প্রচণ্ড দুর্বলতা এবং ক্লান্তি অনুভব করতে পারে।

 শিশুদের হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয়?

##### ৫ গ্রাম/ডেসিলিটার বা এর কম:

এটি একটি মারাত্মক অবস্থা এবং অবিলম্বে রক্ত দেওয়া প্রয়োজন। এই অবস্থায়, শিশুর জীবন হুমকির মুখে পড়তে পারে।

#### রক্ত দেওয়ার প্রক্রিয়া

শিশুদের ক্ষেত্রে রক্ত দেওয়ার প্রক্রিয়া অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পরিচালনা করা হয়। চিকিৎসকরা রক্ত দেওয়ার আগে শিশুর হিমোগ্লোবিনের মাত্রা, শারীরিক অবস্থা, এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যাগুলি মূল্যায়ন করেন।

রক্ত দেওয়ার সময় সতর্কভাবে ডোনারের রক্ত পরীক্ষা করা হয় যাতে তা শিশুর রক্তের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ

হয়। রক্ত দেওয়ার পরে, শিশুকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয় এবং তার অবস্থার উন্নতির দিকে নজর রাখা হয়।

#### রক্তশূন্যতা প্রতিরোধের উপায়

শিশুদের মধ্যে রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করতে হলে তাদের পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করাতে হবে।

আয়রন সমৃদ্ধ খাবার, যেমন পালং শাক, মাংস, ডাল, ডিম, এবং শাকসবজি খাওয়ানো জরুরি।

এছাড়া, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবারও আয়রনের শোষণ বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া, নিয়মিত হিমোগ্লোবিন

পরীক্ষা করানো উচিত এবং হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম হলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা নেওয়া উচিত।

#### পরিশেষে

শিশুদের সুস্থতা নিশ্চিত করার জন্য তাদের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। অভিভাবকদের উচিত হিমোগ্লোবিনের মাত্রা সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া। মনে রাখতে হবে, শিশুরা হলো পরিবারের আয়না, তাদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *