কোন খাবারে কত প্রোটিন

4

কোন খাবারে কত প্রোটিন

প্রোটিন আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। এটি শরীরের কোষগুলো গঠনে, হরমোন উৎপাদনে, এবং মাংসপেশি মেরামতে সহায়তা করে।

প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন অন্তর্ভুক্ত করা খুবই জরুরি, বিশেষ করে যারা শরীরচর্চা করেন বা ওজন কমাতে চান।

আজকের ব্লগে আমরা আলোচনা করব কোন খাবারে কত প্রোটিন থাকে তার একটি বিস্তারিত তালিকা নিয়ে।

### প্রোটিনের প্রয়োজনীয়তা
প্রোটিনের প্রয়োজনীয়তা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে। সাধারণত একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের শরীরের প্রতি

কেজি ওজনের জন্য ০.৮ গ্রাম প্রোটিন প্রয়োজন হয়। তবে যারা শরীরচর্চা করেন, তাদের ক্ষেত্রে এই প্রয়োজনীয়তা বেড়ে যায়।

প্রোটিনের বিভিন্ন উৎস থেকে আমরা প্রতিদিনের প্রোটিন চাহিদা পূরণ করতে পারি। নিচে কিছু সাধারণ খাবারের প্রোটিন কন্টেন্ট উল্লেখ করা হল:

### প্রাণিজ উৎস থেকে প্রোটিন
প্রাণিজ উৎস থেকে প্রাপ্ত প্রোটিন সাধারণত পূর্ণাঙ্গ প্রোটিন হিসেবে বিবেচিত হয়, কারণ এতে সব ধরনের অপরিহার্য অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে।

#### ১. ডিম (Eggs)
ডিম প্রোটিনের একটি অন্যতম উৎকৃষ্ট উৎস। একটি মাঝারি আকারের ডিমে প্রায় ৬ গ্রাম প্রোটিন থাকে।

ডিমের সাদা অংশে বিশেষ করে প্রোটিনের পরিমাণ বেশি। যারা শারীরিকভাবে সক্রিয় বা ওজন কমানোর চেষ্টা করছেন, তাদের জন্য ডিম আদর্শ প্রোটিন উৎস হতে পারে।

কোন খাবারে কত প্রোটিন

#### ২. মুরগির মাংস (Chicken Breast)
মুরগির মাংস, বিশেষ করে মুরগির বুকের মাংস, প্রোটিনের একটি চমৎকার উৎস। ১০০ গ্রাম মুরগির মাংসে

প্রায় ৩১ গ্রাম প্রোটিন থাকে। এটি সহজপাচ্য এবং কম চর্বিযুক্ত হওয়ায় এটি স্বাস্থ্য সচেতনদের জন্য একটি জনপ্রিয় পছন্দ।

#### ৩. মাছ (Fish)
মাছও প্রোটিনের একটি সমৃদ্ধ উৎস। ১০০ গ্রাম মাছের ফিলেতে প্রায় ২০-২৫ গ্রাম প্রোটিন থাকে, যা মাছের

ধরন অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে পারে। বিশেষ করে স্যামন, টুনা, এবং ম্যাকারেল মাছ উচ্চ প্রোটিনযুক্ত এবং এতে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।

#### ৪. গরুর মাংস (Beef)
গরুর মাংস প্রোটিনের একটি উচ্চমানের উৎস। ১০০ গ্রাম গরুর মাংসে প্রায় ২৬-৩১ গ্রাম প্রোটিন থাকে।

তবে গরুর মাংসের সাথে সম্পৃক্ত চর্বি থাকার কারণে এটি নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।

### উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে প্রোটিন
প্রাণিজ উৎসের পাশাপাশি উদ্ভিজ্জ উৎস থেকেও প্রোটিন পাওয়া যায়, যদিও এগুলোতে সাধারণত কম

পরিমাণে প্রোটিন থাকে এবং সকল অ্যামিনো অ্যাসিড একসাথে থাকে না।

#### ১. মসুর ডাল (Lentils)
মসুর ডাল আমাদের দেশের একটি পরিচিত খাবার এবং প্রোটিনের একটি ভালো উৎস। ১০০ গ্রাম মসুর ডালে প্রায় ৯ গ্রাম প্রোটিন থাকে। ভেগান বা নিরামিষভোজীদের জন্য এটি প্রোটিনের চমৎকার বিকল্প।

#### ২. ছোলা (Chickpeas)
ছোলা প্রোটিনের পাশাপাশি ফাইবারেরও একটি উৎকৃষ্ট উৎস। ১০০ গ্রাম ছোলায় প্রায় ১৯ গ্রাম প্রোটিন থাকে। ছোলা থেকে বিভিন্ন ধরনের রান্না করা যায়, যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

৩. টোফু (Tofu)
টোফু, যা সয়াবিন দুধ থেকে তৈরি, একটি উচ্চমানের প্রোটিনের উৎস। ১০০ গ্রাম টোফুতে প্রায় ৮ গ্রাম প্রোটিন থাকে।

এটি ভেগান এবং নিরামিষভোজীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিনের বিকল্প।

কোন খাবারে কত প্রোটিন

#### ৪. বাদাম ও বীজ (Nuts and Seeds)
বাদাম ও বীজ প্রোটিনের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং ফাইবারের একটি ভালো উৎস। ১০০ গ্রাম বাদামে প্রায় ২০-২৫ গ্রাম প্রোটিন থাকে। বিশেষ করে বাদাম, কাজু, চিনাবাদাম এবং কুমড়োর বীজ প্রোটিনে সমৃদ্ধ।

### দুধ এবং দুধজাত পণ্য
দুধ এবং দুধজাত পণ্যও প্রোটিনের ভালো উৎস। এসব পণ্য সাধারণত ক্যালসিয়াম এবং অন্যান্য ভিটামিনে সমৃদ্ধ যা হাড়ের জন্য উপকারী।

#### ১. দুধ (Milk)
এক কাপ (২৪০ মিলি) দুধে প্রায় ৮ গ্রাম প্রোটিন থাকে। যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন বা মাংসপেশি গঠনে আগ্রহী, তাদের জন্য দুধ একটি চমৎকার খাদ্য।

#### ২. দই (Yogurt)
দই, বিশেষ করে গ্রীক দই, প্রোটিনের একটি সমৃদ্ধ উৎস। ১০০ গ্রাম গ্রীক দইয়ে প্রায় ১০ গ্রাম প্রোটিন থাকে। এটি সহজপাচ্য এবং হজমের জন্যও উপকারী।

#### ৩. পনির (Cheese)
পনিরের বিভিন্ন ধরনের রয়েছে এবং প্রোটিনের পরিমাণ পনিরের ধরন অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। ১০০ গ্রাম চেডার পনিরে প্রায় ২৫ গ্রাম প্রোটিন থাকে।

### শস্যদানা ও পাস্তা
যদিও শস্যদানা এবং পাস্তা সাধারণত কার্বোহাইড্রেটের উৎস হিসেবে পরিচিত, তবুও এগুলো প্রোটিনেরও ভালো উৎস হতে পারে।

#### ১. ওটস (Oats)
ওটস একটি সম্পূর্ণ শস্য এবং প্রোটিনের একটি ভালো উৎস। ১০০ গ্রাম ওটসে প্রায় ১৩ গ্রাম প্রোটিন থাকে। এটি প্রাতঃরাশে খাওয়ার জন্য একটি জনপ্রিয় পছন্দ।

#### ২. কুইনোয়া (Quinoa)
কুইনোয়া একটি পূর্ণাঙ্গ প্রোটিনের উৎস, যা সকল প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড সমৃদ্ধ। ১০০ গ্রাম কুইনোয়াতে প্রায় ১৪ গ্রাম প্রোটিন থাকে।

#### ৩. ব্রাউন রাইস (Brown Rice)
ব্রাউন রাইস সাদা চালের তুলনায় বেশি পুষ্টিকর এবং এতে প্রোটিনের পরিমাণও কিছুটা বেশি। ১০০ গ্রাম ব্রাউন রাইসে প্রায় ৩ গ্রাম প্রোটিন থাকে।

### উপসংহার
প্রোটিনের প্রয়োজনীয়তা পূরণে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় বিভিন্ন উৎসের প্রোটিন অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। প্রাণিজ এবং উদ্ভিজ্জ উভয় উৎসের প্রোটিন খাবারের মাধ্যমে আমরা স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখতে পারি। নিয়মিত পরিমিত পরিমাণে প্রোটিন খাওয়া, শরীরের গঠনে এবং সার্বিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *