Cheque এর গল্প (পর্ব-১)

30

Cheque এর গল্প (পর্ব-১)

ব্যাংকে লেনদেনে Cheque এর বহুল ব্যবহার প্রচলিত। চেক জিনিসটা আসলে কী?

এক বাক্যে চেক হলো- ‘একাউন্টধারী কর্তৃক ব্যাংকারকে অর্থ পরিশোধের সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়ার মাধ্যম’।

চেকের মাধ্যমে একজন একাউন্টধারী তার একাউন্টে রক্ষিত অর্থ পরিশোধের জন্য ব্যাংকারকে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেন।

নির্দেশনা তো না লিখেও দেওয়া যায়। গ্রাহক ব্যাংকে এসে বললেন, ভাই আমার একাউন্টে টাকা আছে, ওইখান থেকে আমাকে এক লাখ দেন।

ব্যাংকার টাকা দেবেন না? দিলে সমস্যা কী?

মৌখিক নির্দেশে গ্রাহককে টাকা দিলে ব্যাংকারের প্রথম যে সমস্যা হবে, সেটা হলো তার কাছে কোনো রেকর্ড থাকবে না। পরবর্তীতে যদি একাউন্টধারী টাকা নেবার কথা অস্বীকার করেন, তখন ব্যাংকার কীভাবে সুরক্ষা পাবেন?

আচ্ছা ঠিক আছে, মৌখিক নয়, এক টুকরা সাধারণ কাগজে গ্রাহক যদি লিখে দেন, ‘আমাকে ৫০,০০০/- দেন, ব্যাংকার দেবে না?

৫০০ বছর আগের কথা, যখন প্রথম ব্যাংক শুরু হলো, তখন কিন্তু এভাবেই লেনদেন হতো। গ্রাহক যেকোনো রকম একটা কাগজে লিখে এনে দিলেই ব্যাংকার টাকা দিয়ে দিতো!

এই প্রক্রিয়ায় একটা অসুবিধা ছিলো- একেকজন একেক মাপের কাগজ দিতো, সেগুলো সংরক্ষণে ভীষণ অসুবিধা হতো।

গল্প শুনেছি, একবার এক সুন্দরী ভদ্রমহিলা তার গেঞ্জির পেছনে লিখে নিয়ে এলেন অর্থ পরিশোধের নির্দেশ।

কৌতুহলের ব্যাপার হলো- ব্যাংকার কি সেই মহিলার গেঞ্জি খুলে রেখে দিয়ে পেমেন্ট দিয়েছিলেন?😛 গল্পের বাকি অংশ জানিনা।

এরকম নানা ঘটনা পরম্পরায় ব্যাংকের চেক আজকের রুপ লাভ করেছে।

এখন আমাদের দেশের প্রায় সব ব্যাংকের চেকই এক ধাঁচের, এক মাপের, একই রকম কাগজে মুদ্রিত। একই রকম ওয়ার্ডিং ব্যবহৃত হয় চেকের গায়ে।

Cheque শব্দটা এলো কোথা থেকে? বেশিরভাগ পন্ডিত বলেন, এই শব্দটা এসেছে ‘a check against forgery’ থেকে।

অর্থাৎ, কেউ যেনো জালিয়াতি করে আরেকজনের টাকা ব্যাংক থেকে তুলে না নিতে পারে, তা check দেয়ার জন্যই Cheque এর উদ্ভব।

Cheque বানানটা এসেছে ফ্রেঞ্চ থেকে। ১৮২৮ সালে প্রথম Cheque শব্দটি ব্যবহৃত হয় বলে ধারণা করা হয়।

দুই-একজন অবশ্য বলেন, চেক শব্দটি এসেছে আমেরিকান শব্দ Exchequer থেকে।

ইতিহাস থেকে বাস্তবে ফিরে আসি। আসলেই যদি চেক এর বর্তমান রুপ না থাকতো, সাধারণ কাগজে লিখে ব্যাংকে অর্থ পরিশোধের নিয়ম থাকতো, আপনি কী লিখতেন?

Cheque এর গল্প (পর্ব-১)

যতোদূর সম্ভব আপনি লিখতেন:

ঢাকা
২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪

ম্যানেজার
সোনালী ব্যাংক
লোকাল অফিস, ঢাকা

প্রিয় মহোদয়,
আমি আপনার ব্যাংক শাখার একজন হিসাবধারী। আমার হিসাব নাম্বার……………..। উক্ত হিসাব হতে ১০,০০০/- (দশ হাজার টাকা) নগদে জনাব ‘ক’ কে পরিশোধ করুন।

আপনার সদয় সহযোগিতা একান্ত কাম্য

বিনীত

আপনার একাউন্ট নাম্বার
আপনার ফোন নাম্বার

আপনি কি খেয়াল করে দেখেছেন, উপরের কথাগুলোই একটা চেকে লেখা থাকে?

বিশ্বাস হচ্ছে না?
আমি একটা চেকের ছবি দিলাম। দেখেন তো, এই চেকে কী লেখা আছে?

চেকের উপরে বামদিকে লেখা আছে ব্যাংকের নাম, শাখার নাম। শাখার নামের পাশে একটা বড় সংখ্যা আছে।

এই সংখ্যার নাম রাউটিং নাম্বার। ইলেকট্রনিক পেমেন্ট ব্যবস্থায় এই ইউনিক নাম্বার দিয়ে এই শাখাকে চিহ্নিত করা হয়।

ডানদিকে উপরে একটা নাম্বার আছে। এইটা এই চেকের সিরিয়াল নাম্বার। ব্যাংক যখন গ্রাহককে চেক ইস্যু করে, তখন এরকম সিরিয়াল নাম্বার দিয়ে দেয়, যা দিয়ে চেকের মৌলিকত্ব রক্ষিত হয়।

একটা ব্যাংক থেকে এরকম একটা নাম্বার দিয়ে শুধুমাত্র একটা চেকই ইস্যু করা হয়।

সিরিয়াল নাম্বারের নীচে আছে তারিখ লেখার জায়গা। তারিখটা যাতে মনের মাধুরী মিশিয়ে লিখতে না পারেন, সেজন্য ব্যাংক এটার ফরম্যাট নির্ধারণ করে দিয়েছে। dd/mm/yyyy

নীচের বাম দিকে একাউন্টধারীর নাম এবং একাউন্ট নাম্বার দিয়ে দেওয়া হয়েছে, যাতে কোনো ভজঘট না লাগে।

ডান দিকে গ্রাহকের স্বাক্ষর করার জায়গা রাখা হয়েছে। এই স্বাক্ষর একাউন্ট খোলার সময় ব্যাংকারের কাছে ‘সিগনেচার কার্ড’ এ রক্ষিত স্বাক্ষরের সাথে মিললেই কেবল অর্থ পরিশোধ করবে ব্যাংক।

Cheque এর গল্প (পর্ব-১)

মাঝখানে লেখা আছে ‘Pay to’ তারপর অনেকখানি ফাঁকা জায়গা। যাতে গ্রাহক যাকে টাকা দিতে চান, তার নাম লিখতে পারেন। গ্রাহক চাইলে ওই জায়গায় ‘Self’ লিখে নিজেও টাকা নিতে পারেন।

নীচের লাইনে লেখা আছে ‘The Sum of Taka……………’ যেখানে আপনি টাকার পরিমাণ কথায় লিখতে পারবেন।

আর ডানপাশে একটা বক্স এর মধ্যে লেখা হয়েছে ‘Tk.’…….. যাতে আপনি টাকার পরিমাণ অঙ্কে লিখতে পারেন।

অনেকে চেক এ ‘Pay to’ এর পর লিখেন ‘Cash’। এর মানে দাঁড়ায় ‘ক্যাশ’ কে টাকা পরিশোধ করুন। ক্যাশ তো আসলে কোনো ব্যক্তি নয় যে তাকে টাকা পরিশোধ করা যাবে🥸।

এটি একটি প্রচলিত ভুল। ক্যাশ কে টাকা পরিশোধ করা যায়না। তারপরও ব্যাংকার এরকম চেকে টাকা পরিশোধ করেন।

আসলে বাক্যটা হওয়া উচিত ছিলো ‘Pay by Cash’ অর্থাৎ ‘নগদে পরিশোধ করুন’।

আরেকটা জিনিস লেখা আছে, আপনারা অনেকে খেয়ালই করেন না…।

‘Pay to’ এর পরে ফাঁকা জায়গার শেষে ছোট্ট করে লেখা আছে দুইটা শব্দ ‘or Bearer’ খেয়াল করেছেন। এর অর্থ হলো ‘যার নাম লেখা আছে, তাকে পেমেন্ট দিন অথবা যিনি চেকটি বহন করছেন তাকে পেমেন্ট দিন’।

আপনি যদি এই ‘or Bearer’ শব্দযুগল এক টানে কেটে দেন, তাহলে ব্যাংকারের দায়িত্ব বেড়ে যায়।

তখন ব্যাংকারকে নিশ্চিত করতে হয়, আপনি যার নাম লিখেছেন, তিনিই যেনো পেমেন্ট পান।

এই ‘or Bearer’ শব্দযুগল ব্যাংকারের জন্য বড় সুরক্ষা। এই শব্দযুগল থাকলে ব্যাংকার যে কাউকে আপনার চেকের বিপরীতে অর্থ পরিশোধ করতে পারেন, তেমন কোনো ঝুঁকি ছাড়া।

এখনকার দিনে চেক দিয়ে হাজার হাজার লেনদেন হয়।

Cheque এর গল্প (পর্ব-১)

এই লেনদেনে ঝুঁকি থাকে। গ্রাহকের টাকা ঠিকভাবে পরিশোধ করতে হলে ব্যাংকারকে আইন জানতে হয়।

ব্যাংকার যাতে গ্রাহকের পক্ষ থেকে টাকা পরিশোধ করে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে পারে, সেজন্য রয়েছে সুনির্দিষ্ট নিয়মকানুন।

ব্যাংকারকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য ১৮৮১ সালে তৈরি করা হয়েছিলো ‘Negotiable Instruments Act 1881’ বা ‘হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইন ১৮৮১’। সেই আইন অবিকল রয়েছে প্রায় দেড়শো বছর পরেও।

চেক এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে এবং নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে গ্রাহকের এই আইনের খুঁটিনাটি জানা প্রয়োজন।

চেক এর মাধ্যমে পেমেন্ট এর খুঁটিনাটি নিয়ে একটা ছোটখাটো সিরিজ লিখেছিলাম গত বছর। সেটা ঘষামাজা করে আবার পোস্ট করছি।

পুনশ্চঃ জেনে-বুঝেই নিজের একাউন্টের চেকের ছবি দিয়েছি।

এর ঝুঁকি সম্পর্কে আমি অবগত এবং সেসকল ঝুঁকি মোকাবেলা করার মতো জ্ঞান আমার আছে। এ বিষয়ে সাবধানবাণী না শোনালে আমার ভালো লাগবে।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *